চোখে দেখা যায় না, কানেও শোনা যায় না—তবু সে প্রতিদিন কথা বলে। ভেতরের সেই কণ্ঠস্বর, যার নাম অন্তর্দৃষ্টি। আমাদের অনুভব, অভিজ্ঞতা, ভয়, না বলা কথাগুলো জমতে জমতে একসময় একটা মনের ভাষা তৈরি করে। আমরা হয়তো তাকে অগ্রাহ্য করি, ব্যস্ততায় চাপা দেই, কিন্তু সে চুপ থাকে না।
দিনশেষে, যখন চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে আসে, অন্তর্দৃষ্টি তখন ধীরে ধীরে বলে ওঠে—"আমি ক্লান্ত", "আমি ভালো নেই", "আমার একটু শুনলে হয় না?"
আমরা অন্যদের কথা শুনতে শিখেছি, সামাজিক নিয়মে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখেছি, কিন্তু নিজের কথা শুনতে শিখিনি। অথচ মানসিক সুস্থতার প্রথম ধাপই হলো নিজের ভিতরের কণ্ঠকে গুরুত্ব দেওয়া।
মানসিক চাপ, হতাশা, উদ্বেগ—এসব হঠাৎ করে আসে না। দিনের পর দিন উপেক্ষিত অনুভূতি, অপূর্ণ চাওয়া, চাপা কষ্ট, অব্যক্ত ভয়—সবকিছু মিলে ধীরে ধীরে তৈরি হয় এক অদৃশ্য ভার।
এই ভার কমাতে হলে প্রথমেই দরকার নিজের মনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা। যে অন্তর্দৃষ্টি বলছে, “আর সহ্য হচ্ছে না”—তার কথা শুনুন। তাকে অবহেলা করবেন না। সে আপনিই, আর তার কষ্ট মানেই আপনার কষ্ট।
আপনার অনুভূতির মূল্য আছে। কষ্ট অনুভব করা দুর্বলতা নয়, বরং সেই কষ্ট স্বীকার করে নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াটাই সত্যিকারের শক্তি।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা মানেই পাগল হওয়া নয়। বরং এটি হলো নিজের প্রতি দায়িত্বশীলতা, নিজের ভালো থাকা নিশ্চিত করার সাহস।
যদি মনে হয় আপনি একা লড়ছেন, সাহায্য নিতে ভয় পাবেন না। কাউন্সেলিং, থেরাপি বা একজন ভালো শ্রোতার সঙ্গ—এই ছোট্ট সহায়তাগুলিও জীবনে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে।
তাই আবার জিজ্ঞেস করছি...
অন্তর্দৃষ্টি শুনছেন তো?
না শোনার ভান নয়, এবার একটু সময় দিন তাকে। কারণ আপনি নিজেই নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষ।